পৌষ মেলা 2024: শান্তিনিকেতন, বীরভূম একটি আসন্ন , সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের একটি প্রাণবন্ত উদযাপনের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই অত্যন্ত প্রত্যাশিত ইভেন্টটি শান্তিনিকেতনের সারমর্ম প্রদর্শন করে, যা সারাদেশের দর্শকদের আকর্ষণ করে। পৌষ মেলার জাঁকজমকপূর্ণতায় নিজেকে নিমজ্জিত করার জন্য প্রস্তুত হোন এবং এই মোহনীয় উৎসবের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য উপভোগ করুন। অবশ্যই, এখানে মার্কিন ইংরেজিতে চারটি নতুন বাক্য রয়েছে:
পৌষ মেলা: বাঙালির ঐতিহ্যের উৎসব
পৌষ মেলা শান্তিনিকেতনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত একটি প্রাচীন ও সুপরিচিত উৎসব। প্রতি বছর ৭ পৌষ থেকে শুরু হওয়া এই মেলা শান্তিনিকেতন তথা বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়ের এক অপরিহার্য অংশ। একদিকে এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্রাহ্ম সমাজ আন্দোলনের স্মৃতি, অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিশীল দর্শনের মেলবন্ধন।
পৌষ মেলার ইতিহাস
১৮৯৪ সালে শান্তিনিকেতনে প্রথম পৌষ মেলার সূচনা হয়। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই অঞ্চলে ব্রাহ্ম সমাজের কর্মকাণ্ড প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৬৩ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে ২০ বিঘা জমি কিনে আশ্রম স্থাপন করেন। ১৮৯১ সালে ব্রাহ্ম সমাজের বার্ষিক সমাবেশ উপলক্ষে এক বিশেষ মেলার আয়োজন হয়। এরপরই সেটি পৌষ মেলা নামে পরিচিত হয়। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শ ও দর্শন এই মেলার মূল ভিত্তি।
পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই মেলাকে এক বিশেষ সাংস্কৃতিক রূপ দেন। তিনি এটিকে শুধুমাত্র ব্রাহ্ম সমাজের একটি ধর্মীয় সমাবেশ হিসেবে সীমাবদ্ধ না রেখে এক উদার মানবিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবে রূপান্তরিত করেন।
ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা
পৌষ মেলার মূল আকর্ষণ গ্রামীণ বাংলার জীবনধারা, লোকসংস্কৃতি, এবং হস্তশিল্প। মেলার প্রথম দিন শুরু হয় ব্রহ্মচর্য আশ্রমের ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ প্রার্থনা এবং উৎসর্গ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এরপর তিন দিনব্যাপী মেলায় লোকনৃত্য, বাউল গান, পালাগান, এবং নাটকের আসর বসে।
মেলায় গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী পণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রির জন্য একাধিক স্টল বসে। এখানে পাওয়া যায় হস্তশিল্পের সামগ্রী, মাটির পুতুল, বাঁশ-বেতের জিনিসপত্র, জামদানি শাড়ি, এবং খাদি কাপড়।
—
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও পৌষ মেলা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পৌষ মেলার মাধ্যমে শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতির মেলবন্ধনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য ছিল গ্রাম বাংলার সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা। রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগে মেলায় যোগ হয় বাউল সংগীত, কবিগান, এবং নৃত্যনাট্যের মতো লোকসংস্কৃতির নানা উপাদান।
তিনি বিশ্বাস করতেন, এই মেলা মানুষকে একত্রিত করে, তাদের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলে। শান্তিনিকেতন এই কারণেই কেবল শিক্ষার কেন্দ্র নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
—
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্রাহ্ম আন্দোলন পৌষ মেলার মূল ভিত্তি। তিনি বিশ্বাস করতেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে মানুষের মনে শান্তি ও আনন্দের উদ্রেক হয়। তাঁর উদ্যোগেই শান্তিনিকেতনের পবিত্র বটগাছের তলায় ব্রাহ্ম ধর্মমন্দির স্থাপন করা হয়। এই স্থানটি আজও মেলার মূল কেন্দ্রবিন্দু।
—
পৌষ মেলার বিবরণ
প্রতি বছর পৌষ মাসের ৭ তারিখ থেকে শুরু হওয়া এই মেলা তিন দিনব্যাপী চলে।
1. প্রথম দিন: সকালে উপাসনা গৃহে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। পরে আশ্রমিকরা প্রদক্ষিণ করেন।
2. দ্বিতীয় দিন: মেলা প্রাঙ্গণে বসে হস্তশিল্পের প্রদর্শনী।
3. তৃতীয় দিন: লোকসংস্কৃতির পরিবেশনা।
মেলার অন্যান্য আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ মেলা, মাটির মূর্তি তৈরি, কৃষিপণ্যের প্রদর্শনী, এবং স্থানীয় খাবারের স্টল।
—
পৌষ মেলার পরিবর্তন
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পৌষ মেলার চরিত্রেও পরিবর্তন এসেছে। এখন মেলায় শুধু গ্রামীণ বাংলার শিল্পকলা নয়, আধুনিক পণ্যও বিক্রি হয়। এছাড়া মেলার পরিধি বেড়েছে এবং দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অনেকেই অভিযোগ করেন, আধুনিকতার ছোঁয়া মেলার প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধ্বংস করছে।
বিশ্বভারতীর পরিচালনায় বর্তমানে মেলা পরিচালিত হয়। তবে মেলার পরিবেশ ও ঐতিহ্য রক্ষার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
—
উপসংহার
পৌষ মেলা শুধু একটি মেলা নয়; এটি বাঙালির হৃদয়স্পর্শী সংস্কৃতির প্রতীক। দেবেন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শ ও দর্শনের মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা এই মেলা মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও মানবিকতার বোধ সৃষ্টি করে। শান্তিনিকেতনের এই ঐতিহ্যবাহী মেলা শুধু ইতিহাস নয়, বরং আজও বাঙালির জীবনের অঙ্গ।
পৌষ মেলার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও আধুনিকতার সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি।